যমুনা নদীর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে চরের বালু অবাধে উত্তোলনে মেতে উঠায় গাইড বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যমুনার বাম তীরে বাল্কহেডে ড্রেজার বসিয়ে উত্তোলিত বালু আনলোড করায় গাইড বাঁধের ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে।
জানা গেছে, যমুনায় গত দু’সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে এমনিতেই নদী তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বালু ব্যবসায়ীরা সিরাজগঞ্জ থেকে বাল্কহেডে বালু এনে গাইড বাঁধের কাছে আনলোড করছে। বাল্কহেড থেকে বালু আনলোড করতে ড্রেজার বসাতে হয়। এতে সেখানে তীব্র ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।
গতবছর ভাঙন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে গাইড বাঁধ রক্ষায় জিওব্যাগ ফেলা হয়। বাল্কহেডে বসানো আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে গত বছরের সেই জিওব্যাগগুলো যমুনা গর্ভে ধ্বসে যাচ্ছে। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধ-পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ, বসত-বাড়ি, মসজিদ-মন্দির, ছোট-বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা হুমকিতে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের গোবিন্দাসী ফেরীঘাট এলাকা, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী; নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, সারপলশিয়া ও অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুড়া, কুঠিবয়ড়া, রায়ের বাশালিয়া ও বলরামপুরসহ প্রায় অর্ধশত স্থানে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের গাইড বাঁধের কাছে বাল্কহেডের আনলোড ড্রেজার বসানো হয়েছে।
গত বর্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির উদ্যোগে চিতুলিয়াপাড়া ও ভালকুটিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলা হয়। সে সময় জিওব্যাগ ফেলানোর জন্য স্থানীয় নানা স্থাপনা রক্ষা পায়। কিন্তু এবার কয়েক সপ্তাহ ধরে যমুনার বামতীরে গাইড বাঁধের কাছে বাল্কহেডের আনলোড ডেজ্রার বসিয়ে বালু আনলোড করা হচ্ছে। ফলে জিওব্যাগগুলো ধ্বসে পড়ছে।
চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের অনেকেই নাম প্রকাশ না করে জানান, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও প্রতিবাদ করা যায় না। কিছু কিছু জমির মালিক অল্প টাকার লোভে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। আবার কেউ জমি না দিলে জোরপূর্বক জমি দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে।
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, যমুনা নদীতে গেল দুই সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ওইসব এলাকার কোন কোন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া এমপি মহোদয় ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। বালু আনলোড করার ড্রেজারে যদি ক্ষতি হয় তাহলে সাইট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন জানান, যমুনা নদীর বামতীরে গাইড বাঁধের কাছে বালু আনলোড করার বিষয়ে তিনি জানতে পেরেছেন। ভাঙনরোধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, যমুনার ভূঞাপুর অংশের যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।